জিলকদ মাস ইসলামি কালপঞ্জির ১১তম মাস। এই মাস ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের একটি, যে মাসগুলোতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ। ইসলামি ক্যালেন্ডার চন্দ্রভিত্তিক, নতুন চাঁদের উদয় দেখা গেলে মাস শুরু হয়। এই ক্যালেন্ডার সৌরবছরের তুলনায় ১১-১২ দিন ছোট, তাই জিলকদ বিভিন্ন ঋতুতে স্থানান্তরিত হয়। এই মাসে মুসলিমরা পরবর্তী মাসে অনুষ্ঠিত হজের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। নিচে জিলকদের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও ঘটনাগুলো হিজরি সালসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

হুদায়বিয়ার সন্ধি: ১ জিলকদ ৬ হিজরি

৬ হিজরিতে মহানবী (সা.) ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধি ১০ বছরের জন্য শান্তিচুক্তি হিসেবে কাজ করে এবং ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মুসলিমদের জন্য মক্কায় ওমরাহ পালনের সুযোগ তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে মক্কা বিজয়ের পথ সুগম করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৭৮৫)

হজ ফরজ হলো: ৮ জিলকদ ৯ হিজরি

এই দিনে হজ ফরজ হওয়ার বিধান অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ, যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

জিলকদ মাস থেকে মুসলিমরা পরবর্তী মাসের হজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এরপর রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে হজ্জাতুল বিদা (বিদায় হজ) পালন করেন।

গাদির খুমের ঘটনা: ১৮ জিলকদ ১০ হিজরি

১০ হিজরিতে হজ্জাতুল বিদার পরে নবীজি (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির খুম নামক স্থানে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর প্রশংসা করেন; যা শিয়া পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের কাছে ইমামতের সূচনা হিসেবে ভিত্তি পায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪০৮)

নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর জন্ম: ২৫ জিলকদ

বর্ণিত আছে, এই দিনে নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁদের জন্মতারিখ ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা

খন্দকের যুদ্ধ: ৫ হিজরিতে জিলকদ মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলিমরা কুরাইশ ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য খন্দক খনন করেন। এই যুদ্ধে মুসলিমদের কৌশলগত বিজয় ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,১১৮)

বায়াতে রিদওয়ান (গাছের নিচে শপথ): ৬ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির আগে মুসলিমরা নবী (সা.)-এর নেতৃত্বে একটি গাছের নিচে শপথ গ্রহণ করেন, যা বায়াতে রিদওয়ান নামে পরিচিত। এই ঘটনা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা ফাতহ: ১৮)

প্রথম ওমরাহ: ৭ হিজরিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে প্রথম ওমরাহ পালন করেন, যা হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলাফল ছিল। এটি মুসলিমদের জন্য মক্কায় ইবাদতের অধিকার পুনরুদ্ধারের একটি মাইলফলক। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৮০৭)

জিলকদের পবিত্রতা

হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে এই মাসকে ‘সন্ধির মাস’ বলা হয়। জিলকদ চারটি পবিত্র মাসের (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) একটি। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মাসের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বারোটি, যেদিন তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; তন্মধ্যে চারটি পবিত্র।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)

এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ, যা সুরা বাকারায় উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা বাকারা: ২১৭)। এ মাসের মধ্যবর্তী তিন দিন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বীয’ হিসেবে পরিচিত এবং এ সময় সুন্নাহ হিসেবে রোজা রাখতে উৎসাহিত করা হয়।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন ডটকম

শেয়ার করুন...

সাম্প্রতিক খবর