মিজবাউল হক, চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে স্কুলের অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীর (২৫) রহস্যজনক আত্মহত্যার ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) রাবেয়া খানমকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। আজ রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক-১ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে পদায়ন করা হয়। এক অফিস আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত ও প্রমাণসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ও চকরিয়া কোর্ট পুলিশের পরিদর্শককে সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে থানা হেফাজতে দূর্জয় চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চকরিয়া থানার ওসিকে বদলি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো.সাইফউদ্দীন শাহীন। তার স্থলে পদায়ন করা হয়েছে তৌহিদুল আনোয়ারকে। এর আগে শুক্রবার বিকালে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে এএসআই মো. হানিফ মিয়া ও দুই কনেষ্টবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দূর্জয় চৌধুরীর পিতা কমল চৌধুরী বলেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেনি। এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি অবশ্যই আছে। পুলিশের গাফিলতি থাকায় ওসি সহ অন্যান্য পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদি এরকম না হতো তাহলে পুলিশ প্রত্যাহার করলো কেন? থানার সিসি ফুটেজে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২২ মিনিট পর্যন্ত তাকে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এরপরে আর কোন ভিডিও নাই কেন?

তিনি বলেন, থানায় ফাঁসিতে ঝুলানোর যে ছবি দেখতে পেয়েছি, দুই ইঞ্চি ফাঁক অবস্থায় লোহার গ্রীলে হাত ধরে কীভাবে আত্মহত্যা করা সম্ভব? আমার ছেলের ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত ব্যাগটাও পাচ্ছি না। গত বৃহস্পতিবার আমার ছেলে সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে চলে যান। পরে ওইদিন চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম আমাকে সকাল ১১টার দিকে কল দিয়ে স্কুলে যেতে বলেন। আমি ১০ মিনিটের মধ্যে স্কুলে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি শিক্ষকরা সবাই বসে আছে। সেখানে আমার ছেলে দূর্জয়ও ছিলো।

স্থানীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীকে চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষিক রাবেয়া খানম ও তার সহকর্মীরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওইদিন রাত ৮টার দিকে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্জয় চৌধুরীকে থানা হেফাজতে রাখা হয়। পরণের শার্ট গ্রীলে বেঁধে নিজের গলায় প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে দুর্জয়। শুক্রবার সকালে থানা হাজতে তার লাশ উদ্ধার করে চকরিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব এর উপস্থিতিতে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে মর্গে পাঠানো হয়।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল ৩টার দিকে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বেলা ৪টার দিকে তার লাশ সামাজিক শ্মশানে দাফন (শ্মশানস্ত) করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া থানায় অফিস সহকারী দূর্জয় চৌধুরীর আত্মহত্যার অভিযোগে থানার এএসআই হানিফ মিয়া ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ঘটন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। এতে অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ও চকরিয়া কোর্ট পুলিশের পরিদর্শককে।

এদিকে, শনিবার দুপুরে থানা হেফাজতে দূর্জয় চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চকরিয়া থানার ওসিকে বদলি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো.সাইফউদ্দীন শাহীন। তার স্থলে পদায়ন করা হয়েছে তৌহিদুল আনোয়ারকে।

চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার অভিজিৎ দাস বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী স্যারকে নেতৃত্বে করা তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। খুব দ্রুত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহাকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব বলেন, দূর্জয় চৌধুরীর মৃত্যুর রহস্য নিয়ে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে ওসি সহ চারজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইভাবে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করেছে। দূর্জয় চৌধুরীর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষে মামলার বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে দুর্জয় চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক বলে দাবীর এলাকাবাসীর। তারা এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত পূর্বক বিচার দাবী করেন। তারা বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেফতারও করেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান এলাকাবাসী।

শেয়ার করুন...